হিনা মেহেক:
বাংলাদেশে পথশিশুদের অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে প্রায় ৩৪ লাখ পথশিশু রয়েছে, যারা প্রতিদিন নানা ধরনের বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ।
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ১০ জন পথশিশুর মধ্যে ৮ জনই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ।পথশিশুদের মধ্যে ৯৫.৫% কোনো ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করছে না। এই সকল শিশুরা প্রতিনিয়ত চরম দারিদ্র্য, অপুষ্টি, রোগ, নিরক্ষরতা ও সহিংসতাসহ নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
তাদের শোচনীয় এই পরিস্থিতির বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে ' সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২' শীর্ষক জরিপে। ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই জরিপের প্রতিবেদন আজ প্রকাশিত হয়।
যেসব শিশু তাদের পরিবারসহ বা পরিবার ছাড়া বসবাস বা জীবিকা অর্জনের জন্য তাদের বেশিরভাগ সময় রাস্তায় কাটায় তাদেরকে রাস্তা-ঘাটে বসবাসকারী শিশু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এই শিশুদের বেশিরভাগই ছেলে (৮২ শতাংশ) এবং তাদের বেশিরভাগ দারিদ্র্যের কারণে বা কাজের সন্ধানে রাস্তায় আসে। প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ৬ শতাংশ শিশু এতিম অথবা তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা তা তাদের জানা নেই।
এই সব শিশুদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু পাবলিক প্লেসে বা খোলা জায়গায় থাকে ও ঘুমায়। প্রায় অর্ধেক শিশু মাটিতে ঘুমায় শুধু একটি পাটের ব্যাগ, শক্ত কাগজ, প্লাস্টিকের টুকরো বা একটি পাতলা কম্বল নিয়ে।
রাস্তায় বসবাসকারী শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয় পথচারীদের দ্বারা। জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের প্রতি দশজনের মধ্যে আটজনই পথচারীদের দ্বারা নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করে।
জীবিকা নির্বাহের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য সংগ্রহ, ভিক্ষাবৃত্তি বা চায়ের দোকানে, কারখানা ও ওয়ার্কশপে কাজ করতে বাধ্য হওয়া এই শিশুরা প্রতিদিন আঘাত ও সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের এক তৃতীয়াংশ শিশু কাজ করার সময় আহত হওয়ার কথা জানায়, আর অর্ধেক শিশু জানায় সহিংসতার শিকার হওয়ার কথা। কর্মরত শিশুদের প্রায় অর্ধেকই নয় বছর বয়স থেকে কাজ করতে বাধ্য হয়। এসব শিশুর বেশির ভাগই সপ্তাহে এক হাজার টাকা বা ১০ ডলারের কম অর্থের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছে।
পথশিশুদের সমস্যা সমাধানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতনতা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা, পরিবার ও সমাজের সহানুভূতি, এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করাই হতে পারে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ ইভান শাহরিরায় চৌধুরী তাশদিক, বার্তা সম্পাদকঃ এফ, এম, শামসুল ইসলাম, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ৭১, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
All rights reserved © 2019 deshbortoman.com